জিনসেং কে বলা হয় wonder herbs বা আশ্চর্য লতা। চীনে সহস্র বছর ধরে জিনসেং গাছের মূল আশ্চর্য রকম শক্তি উতপাদনকারী পথ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এছাড়াও এর রয়েছে নানাবিধ গুন।
মুলত দুই ধরণের জিনসেং ঔষধি গুনসম্পন্ন হিসেবে পরিচিত- আমেরিকান ও এশিয়ান। এর মধ্যে এশিয়ান জিনসেং অপেক্ষাকৃত বেশি কার্যকরী। এই দুই ধরণের জিনসেং কে বলা হয় প্যানাক্স জিনসেং।
১) ওজন কমানো- জিনসেংয়ে অনেক রকম রাসায়নিক উপাদান থাকে যা খাবার খাওয়ার ইচ্ছাকে আটকে রাখে। বিশেষ করে শুকনো জিনসেং পাউডার কোনরকম খাবারের লোভকে ট্রিগার করে খিদে পাওয়ার হরমোনকে আটকে রাখে। যার ফলে আপনার ওজন কম করতে সাহায্য করে।
২) রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে- জিনসেং চা উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশন নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। কিছু ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে তা প্রমাণিত।
৩) হরমোনের ভারসাম্য ফিরিয়ে আনে- নারীদের জন্য জিনসেং চা উপকারী কারণ তা হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখে ফলে ব্রেস্ট ক্যান্সার, এন্ডোমেট্রিওসিস এবং এ ধরণের সমস্যাগুলো দূরে রাখে।
৪) মন ও শরীর চাঙ্গা করে- জিনসেং চা পান করার পর মনোযোগ বাড়ে এবং চিন্তাভাবনার ধার বাড়ে বলে দাবি করেন অনেকে। শরীর থেকে স্ট্রেস কমাতে সক্ষম জিনসেং, এ কারণেই তা মস্তিষ্কের ওপর উপকারী এই প্রভাব রাখে।
৫) হৃদস্বাস্থ্য ভালো রাখে- জিনসেং চায়ে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে, যা হৃদযন্ত্রের জন্য উপকারী। জিনসেং হার্ট রেট কমায় এবং হৃৎপিণ্ডে অক্সিজেনের চাহিদা কমায়। এছাড়া হৃদপেশীর শক্তিও বাড়াতে পারে জিনসেং। এতে মায়োপ্যাথির ঝুঁকি কমে।
৬) ত্বক ভালো রাখে- অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের কারণেই ত্বক ভালো রাখতেও জিনসেং কার্যকরী। এছাড়া ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখতেও তা উপকারী।
৭) রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়- সাধারণ ঠাণ্ডা, জ্বর দূর করতে জিনসেং চা ব্যবহার করা হয়। শুধু তাই নয় শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করে এই চা।
৮) ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণ করে- আমেরিকান ও কোরিয়ান দুই পদের জিনসেংই শরীরের ইনসুলিন রেজিসটেন্স কমায়। ফলে রক্তে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে। যাদের টাইপ টু ডায়াবেটিস আছে তাদের জন্য এই চা উপকারী। এছাড়াও যৌন স্বাস্থ্য উন্নতির জন্য কোরিয় পুরুষরা জিনসেং চা পান করে থাকেন। তবে এটা মনে রাখা জরুরী যে অতিরিক্ত পরিমাণে তা পান করা ঠিক নয়। তাতে দেখা যায় ইনসমনিয়া, অস্থিরতা, বমি, মাথাব্যথা ইত্যাদি। বিশেষ করে অসুস্থ ব্যক্তিদের জিনসেং চা পান শুরু করার আগে ডাক্তারের সাথে কথা বলে নেওয়া উচিত।
৯) বয়স বাড়া থামিয়ে- দেয় জিনসেংয়ে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যার ফলে পুরো শরীরে ফ্রি রেডিক্যালসের ঋণাত্মক প্রভাব কম হয়। সাধারণত ফ্রি রেডিক্যালস সেলুলার বিপাকের ফলে তৈরি একটি ক্ষতিকর উপপণ্য। ফ্রি রেডিক্যালস সতেজ কোষগুলোর ক্ষতি করে।
১০) চুলের জন্য উপকারী - চুলের বিভিন্ন সমস্যা যেমনচুল পড়ে যাওয়া এবং টাক ইত্যাদিতে জিনসেং অনেক উপকারী। কারণ জিনসেং এ অনেক প্রাকৃতিক কার্বোহাইড্রেট পাওয়া যায়। অনেক গবেষণায় দেখা গেছে যে জিনসেং চুলের দেখাশোনার জন্য অনেক প্রভাবশালী।
১১) নারীদের জন্যও জিনসেং- নারীদের জন্যও জিনসেং নানা কাজ করে থাকে। বেদনাদায়ক পিএমএস, ব্রেস্ট ক্যানসার রোধে এবং মেনোপজে এর ব্যবহার সঙ্গত। মেনোপজের পর হাড়ের ঘণত্ব কমে যায় বলে হাড় পাতলা ও ভঙ্গুর হয়ে সহজে ফ্রাকচার হতে পারে। এমতাবস্থায় জিনসেং সেবনে এই অবস্থার প্রভূত উন্নতি হয়। অ্যান্টি-এজিং গুণাবলী থাকার কারণে জিনসেংকে ব্যবহার করা হয় বিভিন্ন প্রসাধনীতেও।